মহামারী-অতিমারী এবং কোভিড-১৯ (Epidemic, Pandemic & Covid-19
About Lesson

এপিডেমিক বা মহামারি যখন কোনো  রোগ একই সময়ে বিস্তীর্ণ এলাকা ধরে (এক বা একাধিক দেশের) বিভিন্ন কমিউনিটিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে এপিডেমিক বা মহামারি বলে।

যখন চীনের উহানের বাইরে করোনা ভাইরাস প্রথম দেখা দেয় তখন এটি প্রাদুর্ভাব (OUTBREAK) হিসেবে প্রকাশ পেয়েছিল। পরে যখন আবার চীন সহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশগুলিতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে তখন তাকে মহামারি (এপিডেমিক) হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। এই মহামারী যখন সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে তখন তাকে প্যানডেমিক বা বিশ্বজনীন মহামারী আখ্যা দেওয়া হয়।

এপিডেমিক (Epidemic) এবং আউটব্রেক (Outbreak) প্রায় সমার্থক। যখন কোনো রোগ কম ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তখন সেই মহামারি-কে প্রাদুর্ভাব বা আউটব্রেক বলে। অর্থাত্‍ করোনা রোগটি যখন উহানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল তখন করোনাকে প্রাদুর্ভাব (আউটব্রেক) হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। 

নতুন (Novel) করোনা  ভাইরাসটি কোন পর্যায়ে কতটা বিপদজনকঃ

পর্যায় ১ – সংক্রামিত স্থান থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, দেখা দেয় এক থেকে দুজন ব্যক্তির শরীরে।

পর্যায় ২ – দ্বিতীয় পর্যায়ে আক্রান্তের থেকে তার নিকটবর্তী স্থানে যারা রয়েছেন কেবলমাত্র তাদের মধ্যেই ছড়ায়।

পর্যায় ৩ – এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে তৃতীয় পর্যায় হলো বিপদজনক। কারণ তৃতীয় পর্যায়ে ভাইরাসটি কমিউনিটির মধ্যে ছড়াতে শুরু করে খুবই দ্রুত গতিতে।

পর্যায় ৪ – চতুর্থ পর্যায়ে রোগটি মহামারিতে পরিণত হয়। কখন এবং কোথায় এটির শেষ তা বলা মুশকিল। বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

রোগ যখন স্থানীয় পর্যায়ে ছড়ায় এবং স্থানীয় পর্যায়েই বিস্তার সীমিত থাকে,  তখন বলা হয় এনডেমিক (স্থানীয় প্রকোপ)। এক্ষেত্রে এই রোগ প্রায়ই মানুষের জীবনের আছড়ে পড়তে পারে। যেমনভাবে সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি ছড়িয়ে পড়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ে। তারপর কিছুটা সময় বাদে চলে যায়। এই হল এনডেমিক ডিজিজ। এবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ক্ষেত্রেও এই অবস্থা আসন্ন। অর্থাৎ আর কিছুদিনের মধ্যেই এই রোগটিকে আমরা এনডেমিক রোগ হিসেবে পেতে যাচ্ছি।

করোনা হতে চলেছে এনডেমিক ডিজিজ! এর অর্থ কী?

করোনা (Corona) নিয়ে ব্যস্ত গোটা বিশ্ব। লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ বৃদ্ধির এই আবহে সকলেই বেশ চিন্তায় রয়েছে। ইদানিং করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করেছে। প্রকোপ কখনো বাড়ছে কখনো বা কমছে। এর মাঝেই একদল বিশেষজ্ঞ বলতে শুরু করেছেন করোনা হতে চলেছে এনডেমিক ডিজিজ (Endemic Disease)! এমনকী স্পেনের (Spain) মতো ইউরোপের দেশগুলিও বলতে শুরু করেছে করোনা হয়ে গিয়েছে এনডেমিক। 

বিশ্বব্যাপী কোনও রোগ ছড়িয়ে পড়লে সেই রোগকে বলা হল প্যানডেমিক (Pandemic) বা অতিমারী। এক্ষেত্রে একসঙ্গে প্রায় পৃথিবীর সমস্ত মহাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছিল করোনা ভাইরাস। শুরু হয়েছিল বিশ্বজোড়া আপদকালীন অবস্থা। তাই এই রোগটিকে প্রথমে বলা হয়েছে প্যানডেমিক বা অতিমারী। যদিও এখন দুই বছর আমরা এই রোগের সঙ্গে ঘর করেছি। এক্ষেত্রে ওমিক্রন (Omicron) আসার পর এই রোগের সংক্রমণ বাড়লেও তেমন কোনও গুরুতর সমস্যা দেখা যাচ্ছে না। এর আগে আরও চার উপ-ধরণের করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে, সেগুলো হলো – আলফা (alpaha), বিটা (beta), গামা (gamma) ও ডেল্টা (delta)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অচিরেই এই রোগ এনডেমিক হয়ে যাবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতামত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিন্তু করোনার স্থানীয় সংক্রমণের বিষয়টিকে ঠিক মানতে চাইছে না। তাঁদের কথায়, এমনটা এখনই জোর গলায় বলা যাবে না। কারণ, এখনও পৃথিবীর বহু প্রান্তে এই ভাইরাস রয়েছে স্বমহিমায়। সেক্ষেত্রে এত দ্রুত এই ভাইরাসকে এনডেমিক বললে সতর্কতা অনেকটাই কমে যাবে।

তবে এক্ষেত্রেও সচেতনতার কোনও অভাব রাখলে চলবে না। কারণ রোগটির নাম করোনা। তাই সতর্কতা বজায় রাখুন।

রোগের বিক্ষিপ্ত প্রকোপ (Sporadic) হলো একটি দেশের বা বিশ্বের এক বা একাধিক স্থানে রোগটি বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে বা বিস্তৃত থাকে।

কোভিড-১৯:

করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ বা কোভিড-১৯ মানুষের একটি সংক্রামক ব্যাধি যা গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রীয় রোগলক্ষণসমষ্টি সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস ২ (সার্স-কোভ – ২) নামক এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে হয়ে থাকে। এই ব্যাধিটি সর্বপ্রথম ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের প্রারম্ভে ব্যাধিটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং বৈশ্বিক মহামারীর রূপ ধারণ করে। ব্যাধিটির সাধারণ উপসর্গ হিসেবে জ্বর, সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে মাংসপেশীর ব্যথা, বারবার থুতু সৃষ্টি এবং গলায় ব্যথা দেখা যেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলো নমনীয় আকারে দেখা যায়, কিন্তু কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে ফুসুফুস প্রদাহ (নিউমোনিয়া) এবং বিভিন্ন অঙ্গের বিকলতাও দেখা যায়। সংক্রমিত হবার পরে এই ব্যাধিতে মৃত্যুর হার গড়ে ১.১%, যেখানে ২০ বছরের নিচের রোগীদের মৃত্যুর হার ০.২% এবং ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে রোগীদের প্রায় ১৫%।

এই রোগ সাধারণত সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুকণা থেকে ছড়ায়। এছাড়া সংক্রমিত ব্যক্তির জীবাণু হাঁচি-কাশির কারণে বা জীবাণুযুক্ত হাত দিয়ে স্পর্শ করার কারণে পরিবেশের বিভিন্ন বস্তুর পৃষ্ঠতলে লেগে থাকলে এবং সেই ভাইরাসযুক্ত পৃষ্ঠতল অন্য কেউ হাত দিয়ে স্পর্শ করে নাকে-মুখে-চোখে হাত দিলে করোনাভাইরাস নাক-মুখ-চোখের শ্লেষ্মাঝিল্লী দিয়ে দেহে প্রবেশ করে। আক্রান্ত হওয়ার ২-১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়; গড়ে ৫ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা যায়। সাধারণত নাক কিংবা গলার শ্লেষা পরীক্ষাগারে নিয়ে বিপরীত প্রতিলিপিকরণ পলিমার শৃঙ্খল বিক্রিয়ার (rRT-PCR) মাধ্যমে রোগনির্ণয় করা হয়। এছাড়াও স্বাস্থঝুঁকি, বক্ষের সিটি চিত্রগ্রহণের (সিটি স্ক্যানের) মাধ্যমে ফুসফুস প্রদাহের (নিউমোনিইয়া।

করোনাভাইরাস রোগ প্রতিরোধের জন্য ঘনঘন হাত ধোয়ানির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা, এবং অন্য কোনও ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকা উচিত।সাধারণ ও সুস্থ ব্যক্তির মুখোশ (মাস্ক) ব্যবহার না করলেও চলবে কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন এমন ব্যক্তি এবং তাদের পরিচর্যার লোকেদের চিকিৎসা-মুখোশ (মাস্ক) ব্যবহার অপরিহার্য। কোভিড-১৯ এর কোনো টিকা কিংবা নির্দিষ্ট ভাইরাস নিরোধক নেই। উপসর্গুগলোর চিকিৎসা, সহায়ক যত্নঅন্তরণ বা আইসোলেশন), এবং পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণই করণীয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০১৯-২০২০ করোনাভাইরাস এর আক্রমণকে বৈশ্বিক মহামারী এবং আন্তর্জাতিক উদ্বেগের জনস্বাস্থ্য জরুরী অবস্থা (PHEIC) ঘোষণা করেছে। ছয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অঞ্চলে এই ব্যাধির স্থানীয় সংক্রমণ দেখা গেছে।

লক্ষণ ও উপসর্গ

 
উপসর্গের হার
উপসর্গ শতাংশ
জ্বর ৮৭.৯%
শুকনো কাশি ৬৭.৭%
ক্লান্তি ৩৮.১%
থুতু উৎপাদন ৩৩.৪%
শ্বাসকষ্ট ১৮.৬%
মাংসপেশীতে ব্যথা বা মাংসপেশির সংযোগে ব্যথা ১৪.৮%
গলা ব্যথা ১৩.৯%
মাথা ব্যথা ১৩.৬%
শরীর ঠাণ্ডা ১১.৪%
বমি বা বমি-বমিভাব ৫.০%
নাক বন্ধ ৪.৮%
ডায়রিয়া ৩.৭%
হ্যামোপটোসিস ০.৯%
কনজাঙ্কটিভাইটিস ০.৮%

এই ভাইরাসের ফলে আক্রান্তরা আপাতভাবে সুস্থ মনে হতে পারে, বা ফ্লু-এর মত উপসর্গ দেখা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে জ্বরকাশিশ্বাসকষ্ট অপেক্ষাকৃত কম ক্ষেত্রে দেখা যায় ঊর্ধ্ব শ্বসনতন্ত্রের কিছু লক্ষণ যেমন হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা ইত্যাদি। গ্যাস্টোইনটেস্টিনাল উপসর্গ যেমন বমি-বমিভাব, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদিও খুব কম কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়।চীনে সংঘটিত কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে হৃদযন্ত্রের সমস্যা, যেমন বুক ব্যথা বা চেস্ট টাইটনেস এবং বুক ধড়ফড় করা বা পালপিটেশান। কিছুক্ষেত্রে এই ব্যাধির পরবর্তী ধাপ হিসেবে নিউমোনিয়াএকাধিক অঙ্গ বিকল এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।

অন্যান্য সংক্রমণের মত এক্ষেত্রেও আক্রান্ত ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ার কিছুদিন পরে উপসর্গ দেখাতে শুরু করে। এই সময়কে সুপ্তাবস্থা বলা হয়। কোভিড-১৯ রোগের সুপ্তাবস্থা সাধারণ ৫ থেকে ৬ দিন তবে তা ২ থেকে ১৪ দিনও হতে পারে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ভাইরাসটি ২১ দিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে বলছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।

এটি সাধারণত শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুকনা দিয়ে ছড়িয়ে থাকে যা শ্লেষ্মা এবং হাঁচি থেকে হয়ে থাকে। ভাইরাসটি প্লাস্টিক এবং স্টিলের উপর তিনদিন পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকতে পারে এবং অ্যারোসলে তিনঘণ্টা পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকে। ভাইরাসটি খাদ্যাংশেও পাওয়া যায় কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি নিশ্চিত নয় যে খাদ্যাংশের মাধম্যে সংক্রমন সম্ভব কি না এবং এর ঝুঁকিও কম ধরা হচ্ছে।

ফুসফুস সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে কোভিড-১৯ এর মাধ্যমে কারণ ভাইরাসটি উৎসেচকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক কোষে আক্রমণ করে। এসিই২, যা প্রচুর পরিমানে রয়েছে ফুসফুসের টাইপ ২ এলভিওলার কোষে। ভাইরাসটি ‘স্পাইক’ নামে গ্লাইকোপ্রোটিন এর একটি বিশেষ পৃষ্ঠতল ব্যবহার করে এসিই২ এ যুক্ত হয় এবং নিয়ন্ত্রক কোষে প্রবেশ করে। প্রতি টিস্যুতে এসিই২ এর ঘনত্ব রোগটির ভয়াবহতা বৃদ্ধি করে দেয় এবং কারো কারো মতে এসিই২ এর কর্মদক্ষতা রোধ করা কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। যদিও অন্যদিকে অনুমান করা হয় এনজিওটেনসিন ২ গ্রাহক রোধক ব্যবহার করে এসিই২ এর বৃদ্ধি চিকিৎসায় উন্নতি করতে পারে। এই অনুমানটি অবশ্যই পরীক্ষণীয়। এলভিওলার এর সংক্রমন বৃদ্ধির ফলে শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং মৃত্যু ঘটতে পারে।

ধরা হয়ে থাকে ভাইরাসটি প্রাকৃতিক যার উৎস মানুষ থেকে হতে পারে, এবং স্পিলওভার সংক্রমণের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায়। এটি সর্বপ্রথম ২০১৯ এর নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরে চিনের উহান শহরের মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় এবং জানুয়ারি ২০২০ এ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটা শুরু হয়। ১৭ নভেম্বর ২০১৯ এ প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। ১৪ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত ভাইরাসটির মাধ্যমে ৬৭,৭৯০ জনকে আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে এবং ৩,০৭৫ জনকে মৃত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে; মৃত্যুর হার (কেস ফ্যাটালিটি রেট বা সিএফআর) ৪.৫৪%।

লক্ষণ ও উপসর্গ

 
উপসর্গের হার
উপসর্গ শতাংশ
জ্বর ৮৭.৯%
শুকনো কাশি ৬৭.৭%
ক্লান্তি ৩৮.১%
থুতু উৎপাদন ৩৩.৪%
শ্বাসকষ্ট ১৮.৬%
মাংসপেশীতে ব্যথা বা মাংসপেশির সংযোগে ব্যথা ১৪.৮%
গলা ব্যথা ১৩.৯%
মাথা ব্যথা ১৩.৬%
শরীর ঠাণ্ডা ১১.৪%
বমি বা বমি-বমিভাব ৫.০%
নাক বন্ধ ৪.৮%
ডায়রিয়া ৩.৭%
হ্যামোপটোসিস ০.৯%
কনজাঙ্কটিভাইটিস ০.৮%

এই ভাইরাসের ফলে আক্রান্তরা আপাতভাবে সুস্থ মনে হতে পারে, বা ফ্লু-এর মত উপসর্গ দেখা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে জ্বরকাশিশ্বাসকষ্টঅপেক্ষাকৃত কম ক্ষেত্রে দেখা যায় ঊর্ধ্ব শ্বসনতন্ত্রের কিছু লক্ষণ যেমন হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা ইত্যাদি। গ্যাস্টোইনটেস্টিনাল উপসর্গ যেমন বমি-বমিভাব, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদিও খুব কম কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়। চীনে সংঘটিত কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে হৃদযন্ত্রের সমস্যা, যেমন বুক ব্যথা বা চেস্ট টাইটনেস এবং বুক ধড়ফড় করা বা পালপিটেশান। কিছুক্ষেত্রে এই ব্যাধির পরবর্তী ধাপ হিসেবে নিউমোনিয়াএকাধিক অঙ্গ বিকল এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।

অন্যান্য সংক্রমণের মত এক্ষেত্রেও আক্রান্ত ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ার কিছুদিন পরে উপসর্গ দেখাতে শুরু করে। এই সময়কে সুপ্তাবস্থা বলা হয়। কোভিড-১৯ রোগের সুপ্তাবস্থা সাধারণ ৫ থেকে ৬ দিন তবে তা ২ থেকে ১৪ দিনও হতে পারে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ভাইরাসটি ২১ দিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে বলছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। 

এটি সাধারণত শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুকনা দিয়ে ছড়িয়ে থাকে যা শ্লেষ্মা এবং হাঁচি থেকে হয়ে থাকে।[১৮] ভাইরাসটি প্লাস্টিক এবং স্টিলের উপর তিনদিন পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকতে পারে এবং অ্যারোসলে তিনঘণ্টা পর্যন্ত কার্যক্ষম থাকে। ভাইরাসটি খাদ্যাংশেও পাওয়া যায় কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি নিশ্চিত নয় যে খাদ্যাংশের মাধম্যে সংক্রমন সম্ভব কি না এবং এর ঝুঁকিও কম ধরা হচ্ছে।

ফুসফুস সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে কোভিড-১৯ এর মাধ্যমে কারণ ভাইরাসটি উৎসেচকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক কোষে আক্রমণ করে। এসিই২, যা প্রচুর পরিমানে রয়েছে ফুসফুসের টাইপ ২ এলভিওলার কোষে। ভাইরাসটি ‘স্পাইক’ নামে গ্লাইকোপ্রোটিন এর একটি বিশেষ পৃষ্ঠতল ব্যবহার করে এসিই২ এ যুক্ত হয় এবং নিয়ন্ত্রক কোষে প্রবেশ করে। প্রতি টিস্যুতে এসিই২ এর ঘনত্ব রোগটির ভয়াবহতা বৃদ্ধি করে দেয় এবং কারো কারো মতে এসিই২ এর কর্মদক্ষতা রোধ করা কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। যদিও অন্যদিকে অনুমান করা হয় এনজিওটেনসিন ২ গ্রাহক রোধক ব্যবহার করে এসিই২ এর বৃদ্ধি চিকিৎসায় উন্নতি করতে পারে। এই অনুমানটি অবশ্যই পরীক্ষণীয়। এলভিওলার এর সংক্রমন বৃদ্ধির ফলে শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং মৃত্যু ঘটতে পারে।

ধরা হয়ে থাকে ভাইরাসটি প্রাকৃতিক যার উৎস মানুষ থেকে হতে পারে এবং স্পিলওভার সংক্রমণের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায়। এটি সর্বপ্রথম ২০১৯ এর নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরে চিনের উহান শহরের মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় এবং জানুয়ারি ২০২০ এ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটা শুরু হয়। ১৭ নভেম্বর ২০১৯ এ প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। ১৪ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত ভাইরাসটির মাধ্যমে ৬৭,৭৯০ জনকে আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে এবং ৩,০৭৫ জনকে মৃত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে; মৃত্যুর হার (কেস ফ্যাটালিটি রেট বা সিএফআর) ৪.৫৪%।

করোনাভাইরাস রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয়

 

নিজে এবং পরিবারকে নিরাপদ রাখতে ঘরে অবরুদ্ধ থাকা ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কোভিড-১৯ প্রতিরোধের একটি অন্যতম পদ্ধতি। বাংলাদেশ সরকার এটি মেনে চলার অনুরোধ জানালেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা মানছেন না অনেকেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, করোনা সংকটে নিজে আত্ম-পৃথকীকরণ (আইসোলেশন) বা বিচ্ছিন্ন থেকে বিরাট অবদান রাখা সম্ভব। এতে জীবন বাঁচতে পারে লাখো মানুষের আর এমুহূর্তে তা মেনে চলা প্রত্যেক বাংলাদেশী নাগরিকের জন্যও অতি আবশ্যিক।

করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ (কোভিড-১৯) তথা করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলি নিচে তুলে ধরা হল। এখানে স্মরণীয় যে, করোনাভাইরাস মানুষ-থেকে-মানুষে প্রধানত দুই প্রক্রিয়াতে ছড়াতে পারে। সংক্রমণের প্রথম প্রক্রিয়াটি দুই ধাপে ঘটে। প্রথম ধাপ: করোনাভাইরাস-সংক্রমিত ব্যক্তি ঘরের বাইরে গিয়ে মুখ না ঢেকে হাঁচি-কাশি দিলে করোনাভাইরাস তার আশেপাশের (১-২ মিটার পরিধির মধ্যে) বাতাসে কয়েক ঘণ্টা ভাসমান থাকতে পারে। দ্বিতীয় ধাপ: সেই করোনাভাইরাস কণাযুক্ত বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করলে অন্য ব্যক্তিদের ফুসফুসেও শ্বাসনালি দিয়ে করোনাভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটিও কয়েক ধাপে ঘটে। প্রথম ধাপ: করোনাভাইরাস-সংক্রমিত ব্যক্তি যদি কাশি শিষ্টাচার না মানেন, তাহলে তার হাতে বা ব্যবহৃত বস্তুতে করোনাভাইরাস লেগে থাকবে। দ্বিতীয় ধাপ: এখন যদি উক্ত ব্যক্তি তার পরিবেশের কোথাও যেকোনও বস্তুর পৃষ্ঠতলে সেই করোনাভাইরাসযুক্ত হাত দিয়ে স্পর্শ করেন, তাহলে সেই পৃষ্ঠতলে করোনাভাইরাস পরবর্তী একাধিক দিন লেগে থাকতে পারে। তৃতীয় ধাপ: এখন যদি অন্য কোনও ব্যক্তি সেই করোনাভাইরাসযুক্ত পৃষ্ঠ হাত দিয়ে স্পর্শ করে, তাহলে ঐ নতুন ব্যক্তির হাতে করোনাভাইরাস লেগে যাবে। চতুর্থ ধাপ : হাতে লাগলেই করোনাভাইরাস দেহের ভেতরে বা ফুসফুসে সংক্রমিত হতে পারে না, তাই এখন নতুন ব্যক্তিটি যদি তার সদ্য-করোনাভাইরাসযুক্ত হাতটি দিয়ে নাকে, মুখে বা চোখে স্পর্শ, কেবল তখনই করোনাভাইরাস ঐসব এলাকার উন্মুক্ত শ্লেষ্মাঝিল্লী দিয়ে দেহের ভিতরে প্রবেশ করবে ও প্রথমে গলায় ও পরে ফুসফুসে বংশবিস্তার করা শুরু করবে। এজন্য উপরে লিখিত করোনাভাইরাস ছড়ানোর দুইটি প্রক্রিয়ার শুরুতেই এবং কিংবা ছড়ানোর প্রতিটি অন্তর্বতী ধাপেই যদি করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করা যায়, তাহলে সফলভাবে এই ভাইরাস ও রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য নিচের পরামর্শগুলি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করা সকলের আবশ্যিক কর্তব্য।

  • সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা: করোনাভাইরাস কোনও লক্ষণ-উপসর্গ ছাড়াই দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যেকোনও ব্যক্তির দেহে তার অজান্তেই বিদ্যমান থাকতে পারে। এরকম করোনাভাইরাস বহনকারী ব্যক্তি যদি কোনও কারণে হাঁচি বা কাশি দেন, তাহলে তার আশেপাশের বাতাসে ৩ থেকে ৬ ফুট দূরত্বের মধ্যে করোনাভাইরাসবাহী জলীয় কণা বাতাসে ভাসতে শুরু করে এবং ঐ পরিধির মধ্যে অবস্থিত অন্য যেকোনও ব্যক্তির দেহে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। এ কারণে জনসমাগম বেশি আছে, এরকম এলাকা অতি-আবশ্যক প্রয়োজন না হলে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে যাতে বাতাসে ভাসমান সম্ভাব্য করোনাভাইরাস কণা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ না করতে পারে।
  • হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্তকরণ:
  • নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরী'র মাধ্যমে আপনি কোভিড-১৯ জীবাণু'র সংক্রমন থেকে রক্ষা পেতে পারেন
    নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরী’র মাধ্যমে আপনি কোভিড-১৯ জীবাণু’র সংক্রমন থেকে রক্ষা পেতে পারেন
  •  

  • হাত ধোয়ার পর সেই হাত দিয়েই আবার ট্যাপ বন্ধ করবেন না যেন
    হাত ধোয়ার পর সেই হাত দিয়েই আবার ট্যাপ বন্ধ করবেন না যেন
  •  

  • 'নিজেকে এবং অন্যদেরকে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করুন'। সুইডেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার ইনফোগ্রাফিক
    ‘নিজেকে এবং অন্যদেরকে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করুন’। সুইডেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার ইনফোগ্রাফিক

পরিবেশে অবস্থিত বিভিন্ন বস্তুতে করোনাভাইরাস লেগে থাকতে পারে, তাই এগুলি কেউ হাত দিয়ে স্পর্শ করলে তার হাতেও করোনাভাইরাস লেগে যেতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে করোনাভাইরাস কাঠ, প্লাস্টিক বা ধাতুর তৈরী বস্তুর পৃষ্ঠে গড়ে চার থেকে পাঁচ দিন লেগে থাকতে পারে। মানুষকে জীবনযাপনের প্রয়োজনে এগুলিকে প্রতিনিয়তই হাত দিয়ে স্পর্শ করতে হয়। তাই এগুলি স্পর্শ করার পরে হাত ভাল করে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করা অত্যন্ত জরুরী। নিম্নলিখিত হাত স্পর্শ করার ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রগুলির ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে।

    • অন্য কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিগত বস্তু যা হাত দিয়ে ঘনঘন স্পর্শ করা হয়, যেমন মোবাইল ফোন (মুঠোফোন), ল্যাপটপ, ইত্যাদি নিজ হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
    • বহুসংখ্যক ব্যক্তি স্পর্শ করে এমন যন্ত্র, যেমন এটিএম যন্ত্র (নগদ টাকা প্রদানকারী যন্ত্র) ও অন্য কোনও যন্ত্রের (যেমন দোকানের বা অন্য কোনও স্থানের ল্যাপটপ, কম্পিউটারের মনিটর) বোতাম, চাবি, কিবোর্ড ও হাতল হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
    • নিজ বাসগৃহের বাইরের যেকোনও আসবাবপত্র (চেয়ার, টেবিল, ইত্যাদি) হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
    • নিজ বাসগৃহের বাইরের যেকোনও কামরা বা যানবাহনের দরজার হাতল হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
    • কাগজের টাকা, ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, ইত্যাদি এবং এগুলি যেখানে রাখা হয়, যেমন ওয়ালেট বা পার্স ইত্যাদির অভ্যন্তরভাগ হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
    • রেস্তোরাঁ বা অন্য যেকোনও খাবার বিক্রয়কারী দোকানের থালা-বাসন-বাটি-পাত্র বা বোতল-গেলাস হাত দিয়ে স্পর্শ করা। এইসব তৈজসপত্র বহু ব্যক্তি স্পর্শ করেন এবং এগুলিকে সবসময় সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে কি না, তা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।
    • ঘরের বাইরে যেকোনও স্থানের হাত মোছার তোয়ালে বা রুমাল যা একাধিক ব্যক্তি স্পর্শ করে, সেগুলিকে হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
    • ঘরের বাইরে রাস্তায় বা অন্যত্র কারও সাথে করমর্দন করা (হাত মেলানো) বা কোলাকুলি করা বা ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা।

উপর্যুক্ত ক্ষেত্রগুলিতে হাত দিয়ে স্পর্শের পরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং যত ঘনঘন সম্ভব হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। নিম্নলিখিত হাত ধোয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে:

    • প্রথমে হাত পরিষ্কার পানিতে ভাল করে ভিজিয়ে নিতে হবে।
    • এর পর হাতে বিশেষ জীবাণুমুক্তকারক সাবান (সম্ভব না হলে সাধারণ সাবান) প্রয়োগ করতে হবে ও ফেনা তুলে পুরো হাত ঘষতে হবে।
    • হাতের প্রতিটি আঙুলে যেন সাবান লাগে, তা নিশ্চিত করতে হবে, এজন্য এক হাতের আঙুলের ফাঁকে আরেক হাতের আঙুল ঢুকিয়ে ঘষে কচলাতে হবে।
    • দুই হাতের বুড়ো আঙুল সাবান দিয়ে ঘষা নিশ্চিত করতে হবে।
    • এক হাতের তালুর সাথে আরেক হাতুর তালু ঘষতে হবে এবং এক হাতের তালু দিয়ে আরেক হাতের পিঠও সম্পূর্ণ ঘষতে হবে।
    • প্রতিটি নখের নিচেও ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
    • ঘড়ি, আংটি বা অন্য যেকোন হাতে পরিধেয় বস্তু খুলে সেগুলির নিচে অবস্থিত পৃষ্ঠও পরিষ্কার করতে হবে।
    • কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ফেনা তুলে ভাল করে হাত ঘষতে হবে।
    • পাত্রে রাখা স্থির পানিতে নয়, বরং পড়ন্ত পরিষ্কার পানির ধারাতে হাত রেখে ভাল করে হাত ধুয়ে সম্পূর্ণ সাবানমুক্ত করতে হবে।
    • হাত ধোয়ার পরে তোয়ালে কিংবা রুমাল নয়, বরং একবার ব্যবহার্য কাগজের রুমাল দিয়ে সম্পূর্ণরূপে হাত শুকিয়ে নিতে হবে, কেননা গবেষণায় দেখা গেছে যে ভেজা হাতে ভাইরাস ১০০ গুণ বেশি বংশবিস্তার করে। একাধিক ব্যক্তির ব্যবহৃত তোয়ালে দিয়ে হাত শুকানো যাবে না, এবং একই তোয়ালে দিয়ে বারবার হাত শুকানো যাবে না, তাই একবার-ব্যবহার্য কাগজের রুমাল ব্যতীত অন্য যেকোনও ধরনের তোয়ালে বা রুমাল ব্যবহার করা উচিত নয়।
    • হাত শুকানোর পরে কাগজের রুমাল দিয়ে পানির কল বন্ধ করতে হবে এবং শৌচাগারের দরজার হাতল খুলতে হবে। কারণ পানির কল ও শৌচাগারের দরজার হাতলে ভাইরাস লেগে থাকতে পারে। এরপর কাগজের রুমালটি ঢাকনাযুক্ত বর্জ্যপাত্রে ফেলে দিতে হবে।
    • যেহেতু দিনে বহুবার হাত ধুতে হবে, তাই ত্বকের জন্য কোমল সাবান ব্যবহার করা শ্রেয়।
    • সাবান-পানির ব্যবস্থা না থাকলে কমপক্ষে ৬০% অ্যালকোহলযুক্ত বিশেষ হাত জীবাণুমুক্তকারক দ্রবণ (হ্যান্ড স্যানিটাইজার) দিয়ে হাত কচলে ধুতে হবে। তবে সুযোগ পেলেই নোংরা হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া সবচেয়ে বেশি উত্তম।

কখন হাত ধুতে হবে, তা জানার জন্য নিচের নির্দেশনাগুলি মনে রাখা জরুরি:

    • নাক ঝাড়ার পরে, কাশি বা হাঁচি দেবার পরে হাত ধোবেন।
    • যেকোনও জনসমাগমস্থল যার মধ্যে গণপরিবহন, বাজার কিংবা উপাসনাকেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত, সেগুলিতে পরিদর্শন করার পরেই হাত ধোবেন।
    • বাসা থেকে কর্মস্থলে পৌঁছাবার পর হাত ধোবেন।
    • কর্মস্থল থেকে বাসায় পৌঁছাবার পর হাত ধোবেন।
    • ঘরের বাইরের যেকোনও বস্তুর পৃষ্ঠতল হাত দিয়ে স্পর্শ করার পরে হাত ধোবেন। (উপরে হাত স্পর্শ করার ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রগুলি দেখুন)
    • যেকোনও রোগীর সেবা করার আগে, সেবা করার সময়ে বা তার পরে হাত ধোবেন।
    • খাবার আগে ও পরে হাত ধোবেন।
    • শৌচকার্য করার পরে হাত ধোবেন।
    • বর্জ্যপদার্থ ধরার পরে হাত ধোবেন।
    • পোষা প্রাণী বা অন্য যে কোনও প্রাণীকে স্পর্শ করার পরে হাত ধোবেন।
    • বাচ্চাদের ডায়পার (বিশেষ জাঙ্গিয়া) ধরার পরে বা বাচ্চাদের শৌচকার্যে সাহায্য করার পরে হাত ধোবেন।
    • হাত যদি দেখতে নোংরা মনে হয়, তাহলে সাথে সাথে হাত ধোবেন।
    • হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেন এক রোগী থেকে আরেক রোগী বা অন্য যেকোনও ব্যক্তির দেহে যেন করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে না পারে, সেজন্য সেখানে কর্মরত সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীকে নিম্নের ৫টি মুহূর্তে অবশ্যই হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে : রোগীকে স্পর্শ করার আগে, পরিষ্কারকরণ বা জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি প্রয়োগের আগে, রোগীর দেহজ রস বা তরল গায়ে লাগার সম্ভাবনা থাকলে ঠিক তার পরপর, রোগীকে স্পর্শ করার পর এবং রোগীর আশেপাশের পরিবেশ স্পর্শ করার পর।
  • হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করার সুব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ:
    • রেস্তোরাঁ, চা ও কফিঘর, দোকানপাট, বাজার, বিপণিবিতান, শপিং মল, ইত্যাদি সমস্ত স্থানে হাঁচি-কাশিতে মুখ ঢাকার জন্য ও ভেজা হাত শুকানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে কাগজের রুমাল বা টিস্যু পেপারের ব্যবস্থা করতে হবে। হাত জীবাণুমুক্তকারক দ্রবণ (হ্যান্ড স্যানিটাইজারের) এবং/কিংবা সাবান-পানিতে হাত ধোবার ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যবহারের পর কাগজের রুমাল ফেলে দেবার জন্য (খোলা নয়, বরং) ঢাকনাযুক্ত বর্জ্যপাত্র বা বিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
    • সম্ভব হলে ঘরের বাইরে যাতায়াত বা ভ্রমণের সময় সর্বদা হাত জীবাণুমুক্তকারকের বোতল ও কাগজের রুমাল (টিস্যু পেপার) সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে হবে।
  • নাক, মুখ ও চোখ হাত দিয়ে স্পর্শ না করা: করোনাভাইরাস কেবলমাত্র নাক, মুখ, চোখের উন্মুক্ত শ্লেষ্মাঝিল্লী দিয়ে দেহে প্রবেশ করতে পারে। পরিবেশে উপস্থিত করোনাভাইরাস স্পর্শের মাধ্যমে হাতে লেগে থাকতে পারে। তাই আধোয়া জীবাণুযুক্ত হাতে কখনোই নাক, মুখ, চোখ স্পর্শ করা যাবে না। যদি একান্তই নাকে মুখে চোখে হাত দিতে হয়, তাহলে অবশ্যই হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে তা করতে হবে, কিংবা কাগজের রুমাল ব্যবহার করে নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করতে হবে। এজন্য সবসময় হাতের কাছে সাবান-পানি বা অ্যালোকোহলভিত্তিক হস্ত জীবাণুমুক্তকারক কিংবা কাগজের রুমালের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়মটি মেনে চলা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে। নাক, মুখ ও চোখে হাত দেওয়া খুবই সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি ঘটনা এবং বহুদিনের অভ্যাসের বশে প্রায় সবাই কারণে-অকারণে এ কাজটি করে থাকে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষ ঘণ্টায় ২০ বারেরও বেশি মুখের বিভিন্ন অংশে হাত দিয়ে স্পর্শ করে। কিন্তু নিজদেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে হলে এই অভ্যাসের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। অনেকে মানসিক চাপের কারণে, গভীর চিন্তা করার সময়, অন্য কোনও অজ্ঞাত মানসিক কারণে কিংবা চুলকানির জন্য নাকে, মুখে, চোখে হাত দিয়ে থাকেন। তাই প্রথমে প্রতিটি ব্যক্তিকে নিজেকে বেশ কিছু সময় ধরে নিয়মিত আত্ম-পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে কোন কোন সময়ে বা কারণে সে নিজের নাক, চোখ বা মুখে হাত দিচ্ছে। কারণগুলি চিহ্নিত করার পর এবং এগুলি সম্বন্ধে সচেতন হবার পরে একে একে এগুলিকে দূর করার চেষ্টা করতে হবে এবং নাকে, মুখে, চোখে হাত দেয়ার মাত্রা যথাসর্বোচ্চ সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে।
  • পরিবেশ পরিষ্কার করে করোনাভাইরাস মুক্তকরণ:
    • গৃহ ও কার্যালয়ে যেসব বস্তু অনেক বহিরাগত মানুষ হাত দিয়ে স্পর্শ করে, যেমন দরজার হাতল, কম্পিউটারের কিবোর্ড ও মনিটরের পর্দা, ল্যাপটপ কম্পিউটার, মোবাইল ফোন বা অন্য কোনও বহুল ব্যবহৃত আসবাব ইত্যাদি নিয়মিতভাবে কিছু সময় পরপর জীবাণুনিরোধক স্প্রে বা দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
    • বাইরে থেকে আসার পর পরিধেয় পোশাক ও অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত কাপড় যেমন-বিছানার চাদর, ইত্যাদি নিয়মিত ধুতে হবে।
  • করোনাভাইরাস-বহনকারী সম্ভাব্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে করণীয়
    • যে ব্যক্তির জ্বর, সর্দি, কাশি ও হাঁচি হচ্ছে, তার থেকে ন্যূনতম ৩ থেকে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, যাতে বাতাসে ভাসমান ভাইরাস কণা শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ না করে।
    • রাস্তায় ও যত্রতত্র থুতু ফেলা যাবে না, কেননা থুতু থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
    • হাঁচি-কাশি দেওয়া ব্যক্তিকে অবশ্যই কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় অস্থায়ী কাগজের রুমাল বা টিস্যুপেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে এবং সেই কাগজের রুমাল সাথে সাথে বর্জ্যে ফেলে দিতে হবে। খালি হাত দিয়ে কাশি-হাঁচি ঢাকা যাবে না, কেন না এর ফলে হাতে জীবাণু লেগে যায় (হাত দিয়ে হাঁচি-কাশি ঢাকলে সাথে সাথে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে)। কাগজের রুমাল না থাকলে কনুইয়ের ভাঁজে বা কাপড়ের হাতার উপরের অংশে মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিতে হবে।
    • পরিচিত কারও করোনাভাইরাসের লক্ষণ-উপসর্গ দেখা গেলে সাথে সাথে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা জরুরী ফোনে যোগাযোগ করতে হবে যাতে তাকে দ্রুত পরীক্ষা করা যায় এবং প্রয়োজনে সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টাইন) করে রাখা যায়।
  • বিবিধ:
যেভাবে ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ (PPE) পরবেন
    • রাস্তায় বা অন্যত্র অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুতকৃত ও পরিবেশনকৃত খাবার খাওয়া পরিহার করতে হবে, কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুতকৃত ও অস্বাস্থ্যকর থালা-বাসন-বাটি-পাত্র বা গেলাসে পরিবেশনকৃত খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াতে পারে।
    • রাস্তায় চলাফেরার পথের ধারে উপস্থিত উন্মুক্ত বর্জ্য কিংবা হাসপাতাল ও অন্যত্র উপস্থিত চিকিৎসা বর্জ্যের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
    • হাসপাতালে ও অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে অবশ্যই বিশেষ চিকিৎসা মুখোশ ও হাতমোজা পরিধান করতে হবে, যাতে ভাইরাস এক রোগী থেকে আরেক রোগীতে না ছড়ায়।
0% Complete
Scroll to Top